এম-৮২ বা সিগার গ্যালাক্সি। Credits: ESA/Hubble & NASA |
এম-৮২ এর চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে জানার আগে এটা জানা প্রয়োজন গ্যালাক্সির চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে জেনে আমাদের লাভ কি?
চৌম্বকক্ষেত্র গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ভরপ্রবাহ করতে সাহায্য করে,স্পাইরাল আর্মের গঠন পরিবর্তন করতে পারে,গ্যালাক্সির বাইরের গ্যাসীয় ঘূর্ণনকে প্রভাবিত করে এবং গ্যালাক্সির ঘূর্ণনেও ভূমিকা রাখে।
তাছাড়া গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কেও
ধারণা পাওয়া যায়।তাই গ্যালাক্সির চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।আর এম-৮২ এর
চৌম্বকক্ষেত্র সম্পর্কে জানলে এ ধরনের সবগুলো গ্যালাক্সির চৌম্বকক্ষেত্র এবং এর প্রবাহ
সমপর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
এখন জানা প্রয়োজন সুপারউইন্ড কি?
সুপারউইন্ড হলো নতুন
গঠিত বৃহদাকার নক্ষত্র,ব্ল্যাকহোল বা স্টারবার্স্ট গ্যালাক্টিক প্ল্যান থেকে নির্গত
একধরনের পদার্থের প্রবাহ যা আয়নিত গ্যাস এবং ধূলিকণার রূপে থাকে ।
এধরনের গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র তৈরীর হার অত্যন্ত বেশি মানে
অন্য গ্যালাক্সিগুলোর তুলনায় বহুগুণে বেশি।এম-৮২ একটি স্টারবার্স্ট গ্যালাক্সি।তাছাড়া
এন্টেনা গ্যালাক্সি।
এনটেনা গ্যালাক্সি Credits: ESA/Hubble,NASA,Wikipedia |
এম-৮২ বা সিগার গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কিওয়ে থেকে ১২ মিলিয়ন
আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।এটি একধরনের ইনফ্রারেড গ্যালাক্সি।এম -৮২ এর কেন্দ্রে প্রচুর
পরিমাণে তারা গঠনের জায়গা রয়েছে।আর অত্যন্ত বেশি মহাকর্ষ শক্তি দ্বারা পদার্থ,গ্যাস
মিলিত হয়ে নতুন নক্ষত্র তৈরী করছে।আর এর সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ পদার্থ,গ্যাস সুপারউইন্ড
হিসেবে গ্যালাকটিক প্লেনের ২ মেরু থেকে প্রবাহিত হচ্ছে।এম-৮২ এর সুপারউইন্ড গ্যালাকটিক
প্লেনের সাথে লম্বভাবে অবস্থান যা গ্যালাক্টিক হালো পার হয়ে ইন্টারগ্যালাক্টিক মিডিয়াম
পর্যন্ত মোট ৩৪ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিসৃত।মজার ব্যাপার হলো এই সুপারউইন্ডের ভেতর নক্ষত্র
তৈরী হতে দেখা গেছে যা আবার এই সুপারউইন্ডের গ্যাসকে উত্তেজিত করে এক্স-রে রশ্মি নির্গত
করছে।
গ্যালাক্টিক হালো |
যদিও এম-৮২ সুপারউইন্ড নির্গত করা গ্যালাক্সিদের মধ্যে অনন্য
কোন গ্যালাক্সি নয় কিন্তু গ্যালাক্সিটি কাছে হওয়ায় এবং এর সুপারউইন্ড অনেক বড় হওয়ায়
বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সিকে পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছেন যাতে এ ধরনের গ্যালাক্সির চৌম্বকক্ষেত্র
কেমন হয় তা সম্পর্কে গবেষণা করা যায়। তবে আরেকটি প্রধান প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।গ্যালাক্সির
সুপারউইন্ডের মাধ্যমে যে পদার্থগুলো নির্গত হয় তা ইন্টারগ্যালাক্টিক মিডিয়ামে চলে যায়।কিন্তু পদার্থগুলো যদি ইন্টারগ্যালাক্টিক মিডিয়ামে নির্গত
না হয়ে আবার গ্যালাক্সিতে সঞ্চালিত হয় (কম শক্তি নিয়ে নির্গত হলে বা অন্য কোন কারণ) তখন
এই পদার্থগুলোই গ্যালাক্সির বাইরের রিজিওন বা হালোতে নক্ষত্র গঠন করে।আর যে আকারে
(পদার্থগুলো উপর থেকে পরাবৃত্তের আকারে নিচের দিকে সঞ্চালিত হয়) পদার্থগুলো গ্যালাক্সিতেই
সঞ্চালিত হয় ঐ আকারপ্রাদান করে গ্যালাক্সিটির ম্যাগ্নেটিক ফিল্ড।
এম-৮২ এর চৌম্বকক্ষেত্র ও প্রবাহ Credits: NASA,SOFIA, L. Proudfit; NASA, ESA, Hubble Heritage Team |
এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে বিজ্ঞানীরা এই চৌম্বক ক্ষেত্র শনাক্ত এবং এ নিয়ে গবেষণা করেন!
সুপারউইন্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রন যখন আয়নিত গ্যাসের সাথে চলে
তখন এই ইলেক্ট্রন রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে পোলারাইজড বিকিরণ নির্গত করে।এই বিকিরণগুলো
শনাক্ত করতে পারলেই চৌম্বক ক্ষেত্রের উপস্থিতি বোঝা যায়।আবার যদি চৌম্বক ক্ষেত্রের
রেখাগুলো নির্গত হয়ে বিস্তৃত হয় তখন তাকে “মুক্ত” এবং গ্যালাক্সির চারপাশে লুপ তৈরী
করলে “বদ্ধ” বলা হয়।
গবেষণা থেকে দেখা যায় এম-৮২ এর চৌম্বক ক্ষেত্র গ্যালাক্সির
কেন্দ্র থেকে টান অনুভবের ফলে এর সুপারউইন্ড গ্যালাক্টিক প্ল্যান এর দুপাশে লম্ব আকার
তৈরী করেছে।তবে এম-৮২ এর চৌম্বক ক্ষেত্র মুক্ত না বদ্ধ এটা ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত জটিল।
তবে সম্প্রতি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics (CFA) এর বিজ্ঞানীরা বলেছেন চৌম্বকক্ষেত্রের ভেতরেন থাকা ধূলিকণা থেকে নির্গত ইনফ্রারেড বিকিরণ থেকে এর উত্তর খুঁজে পেয়েছেন তারা।তারা NASA এর Stratospheric Observatory for Infrared Astronomy (SOFIA) এর High-resolution Airborne Wideband Camera-plus (HAWC+) ব্যবহার করে এম-৮২ এর চৌম্বকক্ষেত্রের ম্যাপ তৈরী করেছেন এবং পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর ডাটার সাথে মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে এম-৮২ এর চৌম্বকক্ষেত্র মুক্ত।মজার ব্যাপার হলো যে টেকনিকটা CFA এর বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন ঐ পদ্ধতিতে সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করা হয়।
তথ্য সংগ্রহীত হয়েছেঃ